ফুয়াদ কথন ( পর্ব ২ )

ফুয়াদের কাছে ছুটির দিন আর অন্যান্য দিনের মাঝে তেমন কোন পার্থক্য নেই। ভেবেছিল দুপুর পর্যন্ত ঘুমাবে । কিন্তু সেটা আর হলো না। সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলো একটা ফোন পেয়ে। চোখ মুছতে মুছতে উঠে ফোন হাতে নিল ফুয়াদ ।   ডিসপ্লের দিকে দেখলো লেখা উঠে আছে ' Calling "খালু সাহেব" '। অনিচ্ছা সত্যেও ফোনটা ধরল...

- হ্যালো কে ফুয়াদ ?

- জি খালু ।  গুড মর্নিং ।

- রাখো তোমার মোর্নিং-ফর্নিং ।

- কি হয়েছে?

- I am in deep trouble.

- সমস্যা অর্নবকে নিয়ে। এই গাধা পুত্র আমার লাইফ ত্যানা ত্যানা করে দিয়েছে।তুমি আসো,সাক্ষাতে বিস্তারিত বলবো। তুমি এখনি আমার বাসায় চলে আসো। কুইক। উইথিন হাফ এন আওয়ার।

- ওকে কমরেড।

- তোমার স্বভাবসুলভ ফাইজলামী আমারসাথে করবে না। ওকে?  আর কোন কথা না বলে রওয়ানা হও।

ফুয়াদ রওয়ানা হয়ে গেল । দেড় ঘন্টা বাদে সে গন্তব্যস্থলে পৌছায় । আস্তে আস্তে অতি আদরের সাথে কলিং বেলে টিপ দেল ফুয়াদ  ।  পকাৎ করে দরজা খুলে দিলেন খালা। খোলা মাত্রই ফুয়াদ খালার পায়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ল । খালা চমকে উঠে বললেন,

- এই । কি করছিস?

- কিচ্চু না খালা। সালাম করলাম। সালামি দাও এখন। আজ ম্যালা সামাল দিতে ইচ্ছা কত্তেছে  । যাকেই পাবো সালাম করবো। তোমাদের কাজের বুয়া, দারোয়ান কেউ বাদ যাবে না। খালু কোথায়?
- তোর খালু তার ঘরে। আমরা বিরাট বিপদে পড়েছিরে ফুয়াদ । অর্নব  আমাদের মান ইজ্জত ডুবিয়ে দিয়েছে।একটা মেয়েকে কোথা করে নিয়ে এসেছে।

- বাঘের বাচ্চা । তোমার পুত্র আর পুত্র ভাগাইত কন্যা এখন কোথায়? এখানে?

- মাথা খারাপ? আমি এদেরকে আমার বাড়িতে রাখবো কেনো। মেয়ের বাবা মন্ত্রি শ্রেনীর কেউ। এর মাঝে পুলিশে জানাজানি হয়ে গেছে। আমি অর্নব আর ঐ মাইয়াটাকে  তার নানাবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।

- ভালো করেছো। আমি যাই খালুর সাথে দেখা করে আসি।

খালু সাহেব আয়েশ করে বসে আছেন। তার চোখ মুখ লাল। সামনে তিনটা বোতল। তিনটাই খালি। বুঝাগেলো তিন বোতল পানিয় খাওয়ার কারনেই তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। ফুয়াদ খালু সাহেবের পায়ে ধরে সালাম করল ।

- এটা কি হলো ফুয়াদ ?

- এটা একরকম ব্যায়াম খালুসাহেব। পায়ে ধরে সালাম করার জন্য আপনার মাথা নোয়াতে হবে। এটা করলে গ্র্যাভিটির কারনে আপনার মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়বে। ব্রেইন নিউট্রিশন পাবে ভালোমতো।

- এটা কার আবিষ্কার?

- কার আবিষ্কার সেটা বড় কথা না। বড় কথা হলো ব্যায়ামটা।

মাতাল মানুষকে প্রভাবিত করা সহজ।আরো এঈ অনাকাংখিত বিপদেখালুও মাথা পুরাই আউলায় গেছে ।  খালু সহজেই ফুয়াদের কথা গুলা বিশ্বাস করে নিল

- ফুয়াদ, দাও। তোমার পা দাও। সালাম করি। ব্যায়ামটা হয়ে যাক। আমার মাথায় নিউট্রিশনের দরকার আছে। মাথাটা কাজ করছে না।

ফুয়াদ পা দিল । খালু সাহেব পা ধরে সালাম করলেন, ঠিক তখনই ঘরে ঢুকলেন খালা।

ফুয়াদে পায়ে ধরে সালাম করছেন এই দৃশ্য দেখে খালা পুরা খাম্বিত হয়ে গেলেন। খালু দ্বিতীয়বার ব্যায়াম করার উদ্দেশ্যে খালার পায়ের দিকে এগুলেন। খালা ছোটখাটো একটা চিৎকার করে ঝেড়ে দৌড় দিয়ে নিচে নেমে গেলেন। খালুর মাথায় ব্যায়ামের ব্যাপারটা ভালো মতো ঢুকে গেছে। এটা কোন পর্যন্ত গড়ায় কে জানে! উত্তেজিত মস্তিষ্কে কিছু ঢুকে গেলে সেটার ফল হয় মারাত্মক।
ফুয়াদ নিচে নেমে আসল।  ড্রয়িং রুমে এসে একটা বড় সড় টাস্কি খেল সে ।  বসে আছেন থানার অসি সাহেব । Oh no, what should I do now ? - মনে মনে ভাবল ফুয়াদ । ফুয়াদ কে দেখে ভ্রু কুচকালেন অসি সাহেব ।   বোঝাই যাচ্ছে তিনি ফুয়াদকে দেখে বিরক্ত । ফুয়াদের বিনয়ীভাব দেখে অসি সাহেব কিছু একটা আন্দাজ করে বার বার আড়চোখে তার দিকে দেখছিলো ।   বিরক্ত মানুষকে রাগিয়ে দেয়া সহজ । অসি সাহেবকেও রাগিয়ে দিয়ার চন্তা মাথার আসলো ফুয়াদের । 

- কেমন আছেন অসি সাহেব। আসেন কোলাকোলি করি।

- আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই। আপনাকে আমি চিনি। আপনি মানুষের মাথা আউলা করে দেন। আমার সাথে ভুজং ভাজং করার চেষ্টা করবেন না প্লিজ। আমি কঠিন চিজ। এই বাড়িতে মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। এক মেয়েকে এনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আমি আপনার খালুর সাথে কথা বলতে চাই। তাকে ডাকুন।

খালু সাহেবকে ডাকতে হলো না। তিনি চুপি চুপি এসে দাড়ালেন অসি সাহেবের সামনে। অসি সাহেবখালুকে দেখে বসা থেকে উঠে দাড়ালেন। তখনই একটা ঘটনা  ঘটলো। খালু সাহেব হঠাৎ করে অসি সাহেবের পায়ে হাত দিলেন। সালাম করলেন ।   তারপর পায়ে ধরে টান দিলেন । অসি সাহেব তালসামলাতে পারলেন না। তিনি ধুম করে পড়ে গেলেন। তার মাথা লাগলো পাকা ওয়ালে। তিনি বিরাট চিৎকার করে ভু-পাতিত হলেন এবং কোমায় চলে গেলেন।

ঘটনা জটিল হয়ে গেলো। ফুয়াদ সবসময় জটিলতা এড়িয়ে চলে । এবারও একই কাজ করল।   খালু সাহেবের বাসা থেকে দৌড়ায়ে বের হয়ে গেল । এখন সে যাবে অর্নবের  খোজে। অর্নবের নানা বাড়ি বেশি দূরে না। হেটে যেতে ৩০ মিনিট লাগার কথা। সে হাটতে লাগল..

ফুয়াদকে  দেখে অর্নব চিৎকার করে উঠলো।
- ফুদ ভাআআআআআআআআআ।

- কিরে । তুই নাকি বিয়ে করেছিস?

- আরে বিয়ে না ।  জিহান ভায়ার জন্য একটা মেয়ে ভাগাতে গেছিলাম ।  নিজের ইচ্ছায় না ।  জিহান ভায়া   টাকা দিছিলো  কাজটা করার জন্য।  পরে ঐ মেয়েটাকে নিয়ে ভাইগা আইছি । 

- কস কি ! এত্ত সাহস তোর কবে থেকে হলো?  জানিস এত্তক্ষনে বাড়িতে কি কি হয়ে গেছে ? 

- আরে জানি না আবার । 'চ্যানেল আই' দেখ  ।  আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ । বাবার মাথা নাকি আউলা হয়ে গেছে। তিনি থানার অসিকে উলটা করে ঝুলিয়ে রেখেছেন।

- বলিস কি!

- হ ।  ভায়া

- জিহান কই ?

- ঐতোহ । বট গাছ তলায় ।  সেই মেয়েটার সাথে 
ফুয়াদ টিভির সামনে বসল । ঘটনা সত্যি। খালু সাহেবের বাসার লাইভ বর্ননা দিচ্ছেন জনৈক সুন্দরী তরুনী।

-প্রিয় দর্শক, এই সেই বাসা। যেটার ভেতর ঘটছে অদ্ভুত সব ঘটনা। কিছুক্ষন আগে থানার অসিকে আহত করা হয়েছে। ঘটনার মুল হোতা হলেন এ বাড়ির মালিক । তিনি যাকে দেখছেন পায়ে ধরে টান দিচ্ছেন। তারপর পায়ে ধরে মাথার উপর তুলে ঘুরাচ্ছেন। কিছুক্ষন আগে আরো কিছু পুলিশ সদস্য বাড়ির ভেতর ঢুকেছেন। তার আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে তার পরিনতিও হয়েছে থানার অসি সাহেবের মতো”

কিছুক্ষন পর,
টিভিতে বেশ উৎসাহের সাথে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে মর্জিনা বুয়া।
“আল্লাহ গো! স্যারেরে জ্বিনে ধরছে। যারে দেখতেছে ঠ্যাঙ্গে ধইরা আছাড় দিতেছে। আমাগো গ্রামে একবার  আজগর মাস্টররে একবার এই জ্বিনে ধরছিলো। সে এক বিরাট কাহিনি। কোন মোল্লা মুন্সি তারে ভালো করতে পারে না। তারপর কোনহান থেইকা আসলো এক দাড়িওয়ালা ব্যাটা….”

একটু পর আবার দেখা গেলো উপস্থাপিকাকে
“প্রিয় দর্শক, সুখের খবর হলো এ বাড়ির গৃহকর্তৃকে এই মাত্র পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এবার কথা বলবো তার সাথে”

টিভি পর্দায় দেখা যাচ্ছে খালার বিদ্ধস্ত চেহারা নিয়ে ক্যামেরার সামনে এসেছেন । তিনি চিৎকার করে বলছেন
“আমি কিচ্ছু জানি না, আমি কিচ্ছু জানি না”
খালা এটা বলার পরেই মূর্ছা গেলেন।

ফুয়াদ মনে মনে বলল “হলি কাউ। পবিত্র গাভী !  ”

বাবা-মার এই অবস্থা দেখে অর্নব সিরাম মজা পাচ্ছে। সে কিছুক্ষন পর পর হাতে কিল দিয়ে বলছে “ফুয়াদ ভ্যায়া, ফ্যান্টাস্টিক ব্যাপার ”

- ব্যাপার তো ফ্যান্টাস্টিকই। বাঠ তুই এটা করলি কি !  এখন কি হবে ভাবছিস ?  যা, এক দৌড় দিয়ে জিহানকে ডেকে নিয়ায় ।  এতদিন তোহ দেখতাম এক মেয়ের পর অন্য মেয়ের প্রমে পড়ত ।  আজকে সত্যি সত্যি কাকে নিয়ে আসলো দেখব।  তুই ওকে ডাক দে ....
অর্নব দৌড় দিয়ে চলে গেল ।  কিছুক্ষন পর জিহান কে ঘাড় দুলিয়ে হেটে আসতে দেখা গেল  । ফুয়াদ ওর দিকে বিনয়ী দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,  " ঐ কাকে নিয়ে আসছিস রে ?  আমাকে তোহ কিছু একবারও জানালি না   ।  তা তোর সেইতি কই ?  সাথে দেখছিনা যে ।
জিহান লজ্জায় লাল হয়ে বললো “ও একটু শপিং করতে বের হয়েছে। ও অনেক ভালো। তোর কথাও ওকে বলেছি”

এমন সময় ঘরে ঢুকলো জিহানের সদ্য ভাগাইত মেয়ে । ফুয়াদ যা ধারনা করেছিল তা-ই। জিহান  নিয়ে  আসছে রুপাকে। ফুয়াদের  মাথায় যেন যাত্রীবাহী বাস ভেংগে পড়ল । Oh shit, তুই এইডা কি করছিস !,  মনে মনে বলল ফুয়াদ ।   কেননা এই তার আটাশতম ক্রাশ ছিলো ।  মাত্র ২ দিন আগেও ফুয়াদ কত স্বপ্ন দেখেছিল  এই মেয়েকে নিয়ে।  আশায় লুংগি বেধে ছিলো ।  কিন্তু সব আশা ভরশার  উপর জুস ঢেলে দিয়েছে জিহান। ফুয়াদ জানত জিহান একটা ছেড়ে আরেকটা মেয়ের পিছে লাগে ।  কিন্তু শেষমেশ ফুয়াদের আশায় হস্তমৈথুন করবে ,  এটা সে স্বপ্নেও ভাবি নি ।  Again দুঃখে খাম্বা হয়ে গেল ফুয়াদ। কিছুই ভাবতে পারছিলো না সে ।
জিহান রুপার সাথে ফুয়াদকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
- এই হচ্ছে সেই গ্রেট ফুয়াদ। ঐ যে একবার তোমাকে যার কথা বলেছিলাম।”
মুখ খুললো রুপা, “তোমার কথা অনেক শুনেছি। তোমাকে আমার বেশ ভাল লাগে । আমি তোমার  জন্য একটা জিনিস এনেছি। দেখো তো পছন্দ হয় কি না !”
প্যাকেট থেকে একটা লুংগি বের করল রুপা।  দেখে বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠলো জিহান । “ওয়াও। হলুদ লুংগি ! তার উপর পকেট । রুপা! তুমি জানলে কিভাবে ফুয়াদ  এরকম লুংগি  পরে!”
রুপা রহস্যময় হাসি হাসলো। এই হাসির অনেক অর্থ হতে পারে।
আশ্চর্য! রুপা এই হাসি কবে শিখলো!

ওদেরকে থেকে বিদায় নিয়ে রুপার দেয়া লুংগিটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ফুয়াদ।  আজ শহরে কাঠ ফাটা রোদ উঠেছে। পিচ ঢালা রাস্তায় অদ্ভুত মরিচিকা সৃষ্টি হয়েছে। ফুয়াদ মরিচিকার দিকে এগুতে থাকল । যদিও জানে মরিচিকার কাছে গেলে সেটা দূরে সরে যেতে থাকবে কেবল। আবারো ফুয়াদ সেই ধুলাময়  রাস্থার পাশে ।  হেটে চলছে উদ্দেশহীন ভাবে...   নতুন কোন ক্রাশের আশায়  ।

Comments

  1. হিমুর কোন একটা উপন্যাসের সাথে মিল আছে! কোন উপন্যাসটা মনে করতে পারছি না -_-

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular Posts