ফুয়াদ কথন ( পর্ব ১ )

নতুন কলোনীটা ফুয়াদের খুবই পছন্দ হয়েছে। কলোনীর আঙ্কেল-আন্টি, সিনিয়র-জুনিয়র, গেটের চৌকিদার, সহজকথা কলোনীর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের কাছেই ফুয়াদ প্রিয় একটি নাম। আর হবেই বা না কেন? এরকম বিনয়ী ছেলেকে কে না পছন্দ করে। ছেলেটা এতটাই বিনয়ী যে একজনকে পিছনে পিছনে গামলা নিয়ে ঘুরতে হয় বিনয়ে বিগলিত ফুয়াদকে ধরে রাখার জন্য । কলোনীর জুনিয়র ছেলে আর বাচ্চা মেয়েগুলো ফুয়াদ ভ্যায়া বলতে অজ্ঞ্যান । অর্নবের ইমপ্যাক্ট এতটাই সিভিয়ার যে, কলোনীর জুনিয়র ছেলে আর বাচ্চা মেয়েগুলোর যদি কোন মেডিকেল ইমার্ঞ্জেসীতে অ্যানেস্হেসিয়ার দরকার হয়, তাহলে হাসপাতালে ফুয়াদকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওকে দেখে রোগীরা ‘ফুয়াদ ভ্যায়া বলতে অজ্ঞ্যান’ হয়ে যায়।অ্যানেস্থেসিয়ার আর দরকার হয় না। কলোনীর আঙ্কেল-আন্টিদের কাছে ফুয়াদ খুবই সুশীল একটি ছেলে, বিনয়ের অবতার। কেউ একবার কল্পনাও করতে পারে না যে, এই সুশীল, বিনয়ী, ভদ্র ছেলেটির সতেরো বছরের জীবনে সাতাশ প্রেম হয়েছে।

অবশ্য কল্পনা করতে পারার কথাও না। কারণ সবগুলো সম্পর্কইছিলো হাফ-ওয়েভ রেক্টিফায়ারের মত। অর্থাৎ ফুয়াদের দিক থেকে একশ ভাগ। কিন্তু অপরপক্ষ থেকে শুন্য ভাগ। এই নিয়ে অর্নবের মনে এত্তগুলা দুঃখ । তার মানে এই নয় যে অর্নব হতাশ। আজও ও বিপুল বিক্রমে আঠাশ নাম্বার এর উপর ক্রাশ খাইছে । এরপরও অন্য সিনিয়র ভাইয়েরা যখন প্রেম করে বা বিয়ে করেন তখন  ফুয়াদেএ একটু দুঃখ লাগে। দুঃখে বাইন** হয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। বিয়ের পর যখন বড় ভাইরা পাক্কা বৌ-পিয়াসী হয়ে ছোটভাইদের সময় দেয় না, তখন আরো বেশী দুঃখ লাগে।
ফুয়াদের চশমা আছে। ফ্যাশন গ্লাস নয়। রীতিমতো পাওয়ারওয়ালা চশমা। ডাক্তার সবসময় চশমা ব্যবহার করতে বলেছে। কিন্তু সে চশমা সবসময় না পরে গলায় ঝুলিয়ে রাখে অথবা পান্টের পকেটে।  চশমার স্থান পড়ার টেবিলের ঐ লিটীল ড্রয়ার  । এইটার কারণ সে কাউকে না বললেও কথিত আছে যে, তার অতীত জীবনের জনৈক সুন্দরী তাকে বলেছিলো যে, চশমা ছাড়া নাকি ওকে চরম ড্যাশিং লাগে। এইকথা শোনার পর কার সাধ্য আছে যে ওকে চশমা পরায়? তবে কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে সে এই নিয়মটাকে শীথিল করে [যখন কোন সুন্দ্রী মেয়ে পাশ থেকে হেটে যায়,  তখন তাকে স্পষ্ট ভাবে দেখার জন্য ]

ফুয়াদকে ফটোগ্রাফির ভুতে বছরকখানেক আগে রাতের আধারে জোরছে কামড় দিছিলো ।  সেই থেকে ওর মাথার  ব্যাফুক অংশ জুড়ে ক্যামেরার ফাংশন গুলা জায়গা দখল করে আছে ।  এখন ঘুমের মধ্যে সপ্নে ফটোগ্রাফিক দোষ হয় ।  এই ফুয়াদ  একদিন পোকামাকড় দেখলে পায়ের চটি খুলে পিডাইয়ালাইতোহ ।  বাঠ এখন সে তার ক্যামেরা লইয়া ছুটে আসে,  তারপর শুরু হয় উথালপাতাল  ছবি তোলা ।  সে পোকামাকড়-পশু পাখিদের প্রাইভেছি দেখে না ।  যখন তখন পশু পাখির গোপন ছবি ক্যামেরায় ধারান করে ।  এ সব কারনে  আজ কাল গাছে গাছে কমে গেছে পাখিদের কলরব।  মান ইজ্জত বাচাইতে সব দেশ ছেড়ে ভেগে গেছে ।  আর যাই হোক ছবি তোলার বিশেষ গুন থাকায় & পকেটে এক্ষান শনির চ্রম মোবাইল  থাকায়  কলনীতে এবং কোচিং এ তার বেশ নাম ডাক আছে ।  আপুরা তোহ  ফুয়াদ ফুয়াদ বলে মুর্ছা খায় । 

ফুয়াদের মনটা অনেক নরম (একেবারে আমার মতো ) । সবাইকে সে সমান চোখে দেখে ।  ভালবাসার দৃষ্টিতে সে তেমন ভেদাভেদ করে না।  সে সব মেয়েদের কেই ভালোবাসে ।  তার মনে রুচি আছে ,  দুই-তিন দিন পর পর নতুন নতুন ক্রাশ  খায় ।  ক্রাশিত অবস্থায় ফুয়াদকে অনেক মায়াবি লাগে।  নাবালকার জন্য তার চঞ্চলতা দেখে সুবিশাল আমার এই মনটাকেও নাড়া দেয় । তবে এইটা বিষয়,  Grameenphone এ 3G তে unlimited নেয়ার পর ফুয়াদ কেমন যেন বদলে যায়।  তাকে দেখা যায়না তখন আর কোন রেস্টুরেন্টে, না কোন রাস্থার মোড়ে।  ঘরে ল্যাপটুপে মডেম হান্দাইয়ে সারাদিন কি যেন দেখতে থাকে।  নাবালিকার কথা তখন আর মনে থাকে না।  কিন্তু নেট প্যাকেজ শেষ হয়ার সাথে সাথে আবার ফুয়াদের মনে প্রেমের জাগরন দেখা যায়।  এ রহস্য আজও সমাধান  করতে পারলাম না ।

Comments

Popular Posts