ফুয়াদ কথন ( পর্ব ৩ )

শীতের ছুটিকে সামনে রেখে ফুয়াদের বাসায় তার এক ভাবি ভ্রমন এর নিমত্তে আগমন করিয়াছেন ।  ভাবিটি একটু দুঃসম্পর্কিত হইলেও ফুয়াদের প্রতি তাহার বিশেষ যত্ন পরিলক্ষিত হয় ।  বাসায় অন্য কেউ তাহার খবর নিয়মিত না নিলেও এই ভাবিটি তাহার খোজ খবর ভালোই রাখিতেন ।  বেশ কিছুদিন তিনি ফুয়াদের বাসায় থাকিবেন বলিয়াই তাহার ধারনা ।  ফুয়াদ সারাক্ষণ তাহার থেকে দুরে দুরে থাকার প্রয়াস করিত । বাইরে বন্ধুদের সাথে ঘুরিবার উদ্দেশে সে পড়িবার কথা বলিয়া আগে আগে গৃহ ত্যাগ করিত । 

সেদিন রাত্রিবেলায় বাসায় ফিরিতে একটু না, বরং অনেক খানিই লেইট হইয়াছিলো ফুয়াদের । মাইর খাওয়ার ভয়ে মাকে ডাকিবার সাহস হইলোনা । বাড়ির লোক ঘুমাইয়া পরিয়াছে কিনা নিশ্চিত না হইলেও তাহার পেয়ারকী ভাবি জাগিয়া আছে তা নিশ্চিত বুঝিতে পারিতেছিলো । কারন ভাবি কখনোই রাত্রিবেলায় তাহাকে না খাওয়াইয়া ঘুমায়ইনা । [আ'ম টকিং এবাউট.. ভাত]
অতি সাবধানে দরজায় কান লাগাইয়া ভাবিজানকে ছোট্ট করিয়া একটা মিসকল
মারিল ফুয়াদ । মিসকল ছোট্ট করিয়া মারিলেও সেটা উনার ঢিংকাচিকা ঢিংকাচিকা রিঙটোনের কারনে রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করিয়া বিকটাকার ধারন করিয়া সারা ঘরময় একটা হুলুস্থুল ঘটাইয়া তাহা ফুয়াদের হৃদপিন্ডে ডাইরেক্ট আঘাত হানিল । সবাই জানে এই টোন ভাবি কেবলমাত্র তাহার জন্যই রাখিয়াছে ।

"আজ কি তাহলে কোতল হইয়া যাইবো? ", ফুয়াদের মনে আশংকা !

মৃদু শব্দে দরজা খুলিয়া গেলে দুটো রক্তজবা লাল চোখ ফুয়াদের সম্মুখে উদয় হইয়া এবার তাহার কলিজায় তীর মারিল । নিজের মুখটাতে অনেক কষ্টেও হাসি হাসি ভাব আনিতে চেষ্টা করিলো ফুয়াদ.... পারিলোনা ।

অতি যত্নের সহিত পাশ কাটিয়া তাহার রুমে প্রবেশ করিবা মাত্র, ভাবি কুকিল কন্ঠে রোমান্টিক ভাবে ডাক পারিল, "ফ্রেশ হইয়া খাইতে আসো ।"
ভয়ে ভয়ে জবাব দিল ফুয়াদ, "খাইয়া আসিয়াছি, আজ আর খাইবার ইরাদা নাই ।" ভাবি রিপ্লাই দিল , "তোমার ফালতু বন্ধুগুলোর সহিত কোথায় কি খাইয়া আসিয়াছো বলোতো শুনি ? "

এবার আরো ভয়ে ভয়ে ফুয়াদ কহিল ”ম্যাগি !!”

”তোমার এত অধপতন??”,  বলিয়াই ভাবি সেই রোমান্টিকতা ছাড়িয়া রোদ্রমুর্তি ধারন
করিয়া হুঙ্কার করিয়া পুরো ঘরময় একটা হালকা পাতলা ভুমিকম্পের সৃষ্টি করিলো । ফুয়াদ হাজার ভাবিয়াও উনার অগ্নিমুর্তির হেতু খুঁজিয়া পাইলোনা ।
তড়িৎ মেমোরীতে রিফ্রেশ মারিল । যেখানে ফুয়াদ মনে মনে জিএফকে নিয়ে জপ করিলেও
ভাবি সাহেবান উনার পাওয়ারফুল এন্টেনায় তাহা ক্যাচ করিয়া ফেলিতেন সেখানে আজ কিভাবে ”য” (য'ফলাটা) উনার এন্টেনার উপর দিয়া চলিয়া গেল বুঝিতে পারিলনা ।
তাহার এন্টেনা আবার না হ্যাঙ হইয়া যায় ফুয়াদ তড়িৎ কহিল, " আমরা সবাই মিলিয়া ম্যাগি লুডল্স খাইয়াছি । "

বত্রিশ দাঁত বাহির করিয়া কহিল , ”অনেক টেষ্ট”

ভাবি ফুশ ফুশ করিতে করিতে কহিল, "এবার অন্তুত দুধটাতো খাইয়া যাও ।"
এবার ফুয়াদ আর টু শব্দও করিল না । বাধ্য ছেলের মতো সোজা ভাবির
কাছে যাইয়া একচুমুকেই সব দুধ পান করিয়া গ্লাস খানি টেবিলে রাখিয়া কোনরকমে জান বাঁচাইয়া রুমে আসিয়া বিছনায় শুইয়া পড়িল ।

শুয়ে শুয়ে একটা সুন্দর হিট গল্পের কথা ভাবিতে লাগিল সে । বন্ধুরা কহিয়াছে, ফেবুতে (ফেসবুকে) হিট খাইতে হইলে ১৮+ ছাড়া নাকি কোন উপায় নাই । কিন্তু ফুয়াদ এর চিন্তা-চেতনা অন্য রকম,  সে সামাজিক কোন গল্প লিখিবার ইচ্ছা পোষন করিতেছে । ভাবিতে ভাবিতে একদা সুন্দর এক্ষান গল্পের প্লট তার মাথায় উদয় হইলো ।  গল্পের নাম "বল্টুর মা" রাখিবে বলিয়া স্থির করিলো । 
বল্টুর মাকে নিয়ে  ভাবিতে ভাবিতে কখনযে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিলো খেয়ালই করিতে পারিছিলোনা ।  মায়ের গগন বিদারী ঝাড়িতেই বুঝিতে পারিল ভোর হইয়াছে।
" ১২টা বাজে, এখনো ঘুমাস?? "
ধরপর করিয়া উঠিয়া বাথরুমে দৌড় লাগাইল । হলুদ  লুঙ্গিটা বিছনাতেই পড়িয়া রহিল । মা নিত্যকার মতোই চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলেন ”বড় হইছস এখনো হুশ জ্ঞান হইলোনা, বিয়ের বয়স হইছে, কবে তোর লজ্জাসরম আইবো???”
মনে মনে বলিতে লাগিল , 'সারাক্ষন বিয়ার বয়স হইছে, বিয়ার বয়স হইছে বলিয়া চিৎকার করিতে পারো, বিয়াটা করাইতে পারোনা?? উপযুক্ত পোলা বাহিরে ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়ায়, যামানা খারাপ, কখন কি ঘঠিয়া না যায়। যখন ইজ্জত যাইবো তখন বুঝিতে পারিবা ।'(মুখ ফুটিয়া যদি এই কথাটি মাকে কহিতে পারিলনা ফুয়াদ)

বাথরুমে যে এত শান্তি তাহা বর্ণনাতীত । চোখ বন্ধ করিয়া ত্যাগিয়া এত
শান্তি মনে হয় আর কোথাও নাই । শান্তির মাঝেই বল্টুর মাকে নিয়ে ভাবিতে লাগিল ফুয়াদ । ফেবুর গল্পের কথাই কহিতেছি । গল্পটা বেশি দুর আগাইতে পারিলনা, হঠাৎ
দরজায় বিকট শব্ধে ফুয়াদের শান্তি উড়িয়া গেল । ভাবি হুঙ্কার ছাড়িল,
"ওইখানে বসে বসে কি আকাম করো?? এতক্ষন লাগে কেন ওই খানে?? "
শিটট...একটু শান্তিতে ত্যাগিতেও পারিবেনা ফুয়াদ ? ত্যাগিবার সময়
নাকি কথা বলিতে নাই, কিন্তু কথা না বলিলেযে ভাবির আশঙ্খাই সঠিক বলিয়া গৃহীত
হইবে ভাবিয়া তড়িৎ জবাব দিল, "আরে কৃত্রিম কিছুইতো করিনা, প্রাকৃতিক কর্ম স্বাধন করি । " বাহির হইতে কুকিলা কুকিল কন্ঠে কহিল, " তাড়াতাড়ি বাহির হও, আমার শ্যাম্পু লাগিবে ।"  কি আর করা, ফুয়াদ তড়িৎ হাত চালাইল । [হে হে]

নাস্তা খাইয়া ভাবিতেছিল এবার জুইত করিয়া ল্যাপ্পিতে বসিয়া একটা জম্পেশ গল্প
লিখিয়া ফেলিতেই হইবে । ল্যাপ্পি খুলিয়া  মাত্র ক্লিক করিয়াছে , মা আসিয়া কহিল,
"যা রেডি হইয়া নে । তোর ভাবির সহিত মার্কেটে যাইতে হইবে ।"  ভাবির সহিত বাহির হইলে আবার সাহেব বাবু সাজিয়া যাইতে হয় । বিরক্তকর লাগে ফুয়াদের এসবের । তাই পাঞ্জাবীর সাথে সেন্ডেল পরিয়া রেডি হইয়া বসিয়া থাকিল সে । ভাবির ঘন্টাদুয়েকতো লাগিবেই নিজেকে তৈরী করিতে। এই ফাকে গল্পটা কিছুটা লিখিয়া ফেলিলেই উত্তম হইবে ভাবিয়া ল্যাপ্পিতে বসিল ।
ভাবি হাক মারিল, " কি পরো?"
ভাবিল শ্যু না সেন্ডেল তা জানিতে চাহিলো মনে হয় । ফুয়াদ বলিল ”চটি” পরিতেছি । কি না কি ভাবিয়া ভাবি দৌড়াইয়া আসিয়া হুঙ্কার ছাড়িয়া কহিল, "বের কর চটি, এই সাজ সকালে তুই চটি পড়িস?? কত্তোবড় সাহস, এত্ত অধঃপতন তোর?? কই বের কর । আজ তোকে সুদ্ধ তোর চটি জ্বালাবো ।"
ফুয়াদ কাহিনী বুঝিতে পারিলো না.. ফ্যাকাসে মুখ করিয়া টেবিলের নীচে পা হইতে চটিজোড়া খুলিয়া লইয়া ভাবির হাতে তুলিয়া দিল । ভাবি তাহার চটি হাতে লইয়া কি যেন ভাবিলেন ,  আবার তাহা যথাস্থানে রাখিয়া চলিয়া গেলেন ।
ফুয়াদ তোহ চোদনা হইয়া গেলো .....  !

ফুয়াদের আর "বল্টুর মা" লেখা হইলো না ।  ফেবুতেও হিট হওয়া হইলো না ।  এত্তগুলা আপাসুস....... 

Comments

Popular Posts